ভূমিহীনদের সরকারি সম্পদ দখলে আগুন, লুটপাট ও সাইনবোর্ড ভাংচুর


রুদ্রবাংলা প্রকাশের সময় : অগাস্ট ২৫, ২০২৪, ০৭:০০ /
ভূমিহীনদের সরকারি সম্পদ দখলে আগুন, লুটপাট ও সাইনবোর্ড ভাংচুর

শহিদুল ইসলাম, সাভারঃ সাভার উপজেলার আশুলিয়া থানাধীন আউকপাড়া মৌজায় ছিন্নমূল ভূমিহীনদের জন্য বরাদ্দকৃত বিশ একর (২০ একর) সরকারী জমি দখল করে নেয়ার জন্য লুটপাট, আগুন, দখল, সরকারি গাছকাটা সহ সন্ত্রাসী ভাড়া করে সাইনবোর্ড ভাংচুর করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

২০০৫ সাল থেকে ভূমিহীনদের সমিতি ন্যাশনাল প্লাজা বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের অনুকূলে কোর্ট অব ওয়ার্ডস ঢাকা নবাব স্টেট এর মালিকানাধীন বিশ একর জমি কৃষি প্রকল্প স্থাপনের জন্য একসনা লীজ পায় সমিতির সহ-সভাপতি আইয়ুব আলী শিকদারের নামে। পরে ২০১৩ সালে বসবাসের জন্য আবাসিক অনুমোদন পায়।

এব্যাপারে ভুক্তভোগী ঐ প্রকল্পের সদস্য ও কেয়ার টেকার বদরুল আলম আশুলিয়া থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। তিনি গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, আমি ন্যাশনাল প্লাজা বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সদস্য হয়ে ২০ শতাংশ জমি লিজ নিয়ে তিনটি টিনের ঘর তৈরি করে বসবাস করে আসতেছি কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে একটি চক্র আমার বাড়ী সহ এই প্রকল্প দখল করার পায়তারা করছিলো। তারই ধারাবাহিকতায় গত ২০ আগস্ট দুপুর ২:৩০ ঘটিকার দিকে আলতাফ আলীর ছেলে মোঃ কবির হোসেন, আইয়ুব আলীর ছেলে মতিয়ার রহমান ও সেহান মিয়ার ছেলে সালামের নেতৃত্ব আরো ১৫/২০ জন বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে আমার উপর হামলা করে এবং বেদম মারধর করতে করতে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয় এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে হুমকি দিয়ে বলে পরবর্তী তে এই এলাকার আশেপাশে পেলে আমাকে জানে মেরে ফেলবে। পড়ে আমার বাড়ীর সকল আসবাব পত্র ও মালামাল লুট করে নিয়ে যাওয়ার পরে অবশিষ্ট মালপত্র আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেয়। যাতে এই বাড়ীতে কখনো আসতে না পারি। এতে আমার প্রায় ২ লক্ষ টাকার নগদ ক্ষয়ক্ষতির হয় ও আমার স্থাপনা নষ্ট হয়ে যায়। এই অবস্থায় আমি ও আমার পরিবার খোলা আকাশের চরম নিরাপত্তাহীনহায় আছি। আমি আমার বাড়ী ও এই সন্ত্রাসীদের উপযুক্ত শাস্তি দাবি করছি।

এদিকে সরজমিনে তদন্ত করতে গেলে দেখা যায় যে, উক্ত প্রকল্পের দক্ষিণাংশের ১০০ শতাংশের কাঠ বাগানের গাছ কেটে নেওয়া হচ্ছে। এবিষয়ে স্থানীয় সাধারণ মানুষের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, স্থানীয় প্রভাবশালী আশুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৬নং ওয়ার্ডের সদস্য ইজ্জত আলীর ছেলে শাহীন মেম্বার গাছ করছেন। গণমাধ্যমকর্মীরা শাহীন মেম্বার এর কাছে জানতে চাইলে তিনি এই জমি তার ক্রয়কৃত সম্পত্তি বলে দাবি করেন।

অপর দিকে ন্যাশনাল প্লাজা বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এই প্রকল্পের জন্য ২০ একর জমির লিজ গ্রহিতা আইয়ুব আলী শিকদার অভিযোগ করে বলেন, ভূমিহীন ছিন্নমূলদের জন্য বরাদ্দকৃত সরকারি সম্পত্তি দখলের জন্য স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন চেয়ারম্যান নির্দেশ তার পালিত সন্ত্রাসী বাহিনী দ্বারা এবং আ.ন.ম নাজিবুল্লাহ নাসের, মোস্তাফিজউল্লাহ শামসু, মাইদুল ইসলাম মানিক, মতিয়ার রহমান, সাইদ, ড্রাইভার কবির, সালেহীন খান সাহীদ, শাহীন মেম্বার এর নেতৃত্বে আরো শতাধিক ভাড়াটে সন্ত্রাসী বাহিনী দ্বারা আমাদের ভূমিহীনদের শেষ সম্বল সরকারী জমি দখল করে নেয়ার জন্য লুটপাট, আগুন, দখল, সরকারি গাছকাটা সহ সাইনবোর্ড ভাংচুর করে। এ ব্যাপারে আমি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছি।

তিনি আরো বলেন, ২০০৫ সাল থেকে আমি ও আমার সমিতির সদস্যগণ তিল তিল করে এই প্রকল্পের জন্য অর্থ, শ্রম ও সময় ব্যায় করে এই অবস্থায় পৌঁছেছি। সেই প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকেই আমাদের সমিতির কিছু অসৎ সদস্য বিভিন্ন ভাবে দুর্নীতি ও অনিয়ম করে আসছে। সমিতির তৎকালীন সভাপতি আ.ন.ম নজিবুল্লাহ নাসের ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মোস্তাক আহমেদের নেতৃত্ব চলছে নিরবিচ্ছিন্ন চাঁদাবাজি, দুর্নীতি ও অনিয়ম। পরবর্তীতে তাদের সহ তাদের দোসরদের সমিতি থেকে বহিষ্কার করলে তারা স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন চেয়ারম্যান ও তার পালিত সন্ত্রাসী বাহিনীর মাধ্যমে এই ভূমিহীনদের জন্য বরাদ্দকৃত সরকারি সম্পত্তি দখলে নেয়ার উদ্দেশ্যে নিরবচ্ছিন্ন নির্যাতন চলতে থাকে। কিন্তু প্রতিবারই তারা ব্যার্থ হয়। কিন্তু গত ১ আগস্ট সমিতি’র নামে জমি রেকর্ড করার কাগজ হাতে পাই, এরপর থেকেই দখলদারদের ঘুম হারাম হয়ে যায়। এবং বিভিন্ন ভাবে দখলের অপচেষ্টা চালায়, তারই ধারাবাহিকতায় ২০ আগস্ট প্রকল্পে বসবাসরত সদস্য ও আমাদের কেয়ার টেকার বদরুল আলম মারধর করে তাকে ও আমাকে মৃত্যুর হুমকি দিয়ে বের করে দেয়। পরবর্তীতে তার সব কিছু লুটকরে নিয়ে বাকি মালামাল আগুনে পুড়িয়ে দেয়। এবং ২৩ তারিখে কয়েকশত সন্ত্রাসী ভাড়া করে এনে প্রকল্পের সকল সাইনবোর্ড ভাংচুর করে তাদের নামে সাইনবোর্ড দিয়ে এলাকায় ভীতি সৃষ্টি করে জনমনে আতংক ছড়িয়ে উক্ত জমি দখলে নেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আমি প্রশাসনের সকল বিভাগের কাছে আকুল আবেদন করছি আমাদের ভূমিহীনদের শেষ আশ্রয়স্থন ও সরকারি জমি বেহাত হওয়া থেকে রক্ষা করার জন্য।