শেখ সিরাজউদ্দৌলা লিংকন কয়রা (খুলনা),
“হর হর মহাদেব” ধ্বনিতে সাড়ম্বতাপূর্ণ পরিবেশে খুলনার কয়রায় প্রায় দীর্ঘ দেড় যুগ বন্ধ থাকার পর লাট মহেশ্বরীপুর সার্বজনীন শিব মন্দিরে আবারো সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব চড়ক পূজা (শিব পূজ) অনুষ্ঠিত হয়েছে। দারুন খুশি সনাতন ধর্ম অবলম্বীরা। পূজা উৎসবকে প্রাণবন্ত করতে ও তাদের সহযোগিতা করে করে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন মুসলিম সম্প্রদায়।
স্থানীয় সংসদ বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ,এ উৎসবে তার প্রতিফলন ঘটেছে।
প্রাণ ফিরে পেলো সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ঐতিহ্যবাহী শত বছরের পুরানো শিব মন্দির। তাই দীর্ঘ প্রায় দেড় যুগ পর সনাতন ধর্মাবলম্বীরা তাদের পুরাতন শিব মন্দিরে পূজা দিতে পেরে আনন্দে মেতে ওঠে। হাজার হাজার পূজা অর্চনা কারী ও দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে মন্দির প্রাঙ্গন।
শনিবার বিকাল তিনটায় লাট মহেশ্বরীপুর সর্বজনীন শিবমন্দিরের শত বছর পূর্তিতে মন্দির কমিটির আয়োজনে পূজা উৎসবের সমাপনী দিনে মন্দির প্রাঙ্গনে চড়ক পূজা ও গ্রাম বাংলার হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী ঘোড়া দৌড় প্রতিযোগিতা ও চড়ক ঘূর্ণি উদযাপিত হয় ।
লাট মহেশ্বরীপুর সার্বজনীন শিব মন্দির কমিটির সভাপতি সনাতন কুমার রায়ের সভাপতিিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খুলনা ৬ (কয়রা পাইকগাছা ) আসনের সংসদ সদস্য মোঃ রশীদুজ্জামান, বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি জিএম মোহসিন রেজা,কয়রা উপজেলা যুবলীগ সভাপতি ও কয়রা উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিশিত রঞ্জন মিস্ত্রি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিরিক্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আব্দুল হাকিম,কয়রা থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মিজানুর রহমান, মহেশ্বরীপুর ইউপি চেয়ারম্যান প্রভাষক শাহনেওয়াজ শিকারিসহ ১০ সহশ্রাধিক মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
মন্দির কমিটির সার্বিক পরিচালক ও কয়রা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিশিত রঞ্জন মিস্ত্রি বলেন, ১৯৩০ সালে তৎকালীন জমিদার রমেশ চন্দ্র ঘোষ খুলনার কয়রা উপজেলার সুন্দরবন বেষ্টিত মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নে “লাট মহেশ্বরীপুর সার্বজনীন শিব মন্দির”টি স্থাপন করেন। সেই থেকে সেখানে প্রতিবছর চৈত্র মাসের ২৩ তারিখ থেকে ৩০ তারিখ পর্যন্ত সাত দিন ব্যাপি চৈত্র সংক্রান্তি চড়ক পূজা উদযাপন হয়ে আসছিল। কিন্তু ২০০৯ সালের ঘূর্ণিঝড় আইলার তান্ডবে তিন কক্ষ বিশিষ্ট মন্দিরের দুইটি ঘর সম্পূর্ণভাবে লন্ডভন্ড হয়ে যায়। সুযোগ বুঝে প্রভাবশালীমহল মন্দির প্রাঙ্গন সহ বৃহত্তর এলাকার কৃষি জমি আয়ত্ত করে লবন পানির চিংড়ি ঘেরের নামে জবরদখলে রাখায় পূজা অর্চনা বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘদিন যাবত শত বছরের ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় উৎসব বন্ধ থাকায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছিল।
লবণ পানির আগ্রাসন থেকে কৃষি জমি ও মন্দির প্রাঙ্গন রক্ষার দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের পর স্থানীয় সংসদ সদস্যের হস্তক্ষেপে প্রায় দীর্ঘ দেড় যুগ পর গত ২৩ চৈত্র প্রভাবশালীদের লবণ পানির আগ্রাসন থেকে মন্দির প্রাঙ্গন ফিরে পাওয়ায় ফিরে এসেছে প্রাণের উচ্ছ্বাস। তিনি আরো বলেন, এমতাবস্থায় সরকারি প্রশাসনিক ও আর্থিক সাহায্যের একান্ত প্রয়োজন। এককালীন ও বাৎসরিক সরকারি অনুদান পেলে মেলার আঙ্গিনার বিস্তৃৃতি ও মন্দির পুনঃসংস্কারের মধ্য দিয়ে মেলাটি আবার ফিরে পাবে তার পূর্ণ উদ্যম, উৎসাহ-উদ্দীপনা, শত বছরের পুরনো লৌকিক ও ধর্মীয় কৃষ্টি সংস্কৃতির ঐতিহ্য যা মেলাটিকে নব যৌবনে সিক্ত করে প্রাণোচ্ছল ও প্রাণস্পন্দনের সম্মিলনে সঞ্জিবনী শক্তির সঞ্চার সাধন করবে বলে ঐকান্তিক বিশ্বাস।##
আপনার মতামত লিখুন :