শ্রমিকশ্রেণির মুক্তির আন্দোলনে কমরেড লেনিন আজও পথপ্রদর্শক লেনিনের মৃত্যুশতবার্ষিকী উপলক্ষে বাসদের স্মরণসভায় নেতৃবৃন্দ


রুদ্রবাংলা প্রকাশের সময় : জানুয়ারী ২২, ২০২৪, ১২:৩০ /
শ্রমিকশ্রেণির মুক্তির আন্দোলনে কমরেড লেনিন আজও পথপ্রদর্শক  লেনিনের মৃত্যুশতবার্ষিকী উপলক্ষে বাসদের স্মরণসভায় নেতৃবৃন্দ

মহান রুশ বিপ্লবের রূপকার, বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষের অন্যতম মহান নেতা ভ্লাদিমির ইলিচ উলিয়ানভ লেনিন এর মৃত্যুশতবার্ষিকীতে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ এর উদ্যোগে আজ সেগুনবাগিচাস্থ ভ্যানগার্ড মিলনায়তনে লেনিন স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়।

স্মরণসভায় বাসদের সাধারণ সম্পাদক কমরেড বজলুর রশীদ ফিরোজের সভাপতিত্বে আলোচনা করেন বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা কমরেড খালেকুজ্জামান, বাসদের সহকারী সাধারণ সম্পাদক কমরেড রাজেকুজ্জামান রতন। সভা পরিচালনা করেন দলের সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য নিখিল দাস।

আলোচনা সভায় নেতৃবৃন্দ বলেন, কমরেড লেনিন ১৯১৭ সালের ৭ নভেম্বর রাশিয়ায় সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের মাধ্যমে পৃথিবীতে প্রথম শ্রমিক শ্রেণির রাষ্ট্র নির্মাণ করেন। শ্রমিকশ্রেণি রাষ্ট্র পরিচালনা করবে, এ যাবতকাল যা ছিল কল্পনার বিষয় লেনিনের নেতৃত্বে রাশিয়ার জনগণ সেই কল্পনাকে বাস্তবে রূপায়িত করেন। পুঁজি ও ব্যক্তিমালিকানার অবসান ঘটানোর লক্ষ্যে সামাজিক মালিকানাভিত্তিক সমাজতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে লেনিন পরিচালনা করেন এক দীর্ঘ সংগ্রাম। এই দীর্ঘ সংগ্রামের যাত্রাপথে তিনি যেমন বিভিন্ন মতাদর্শিক বিভ্রান্তি থেকে কমিউনিস্ট আন্দোলনকে রক্ষা করেন আবার বিপ্লব সংগঠনের জন্য একটা বিপ্লবী রাজনৈতিক দল গড়ে তোলার মার্কসবাদী দৃষ্টিভঙ্গীকেও বিস্তৃত করেন। অনেকেই মনে করেন লেনিন কেবল বুদ্ধিবৃত্তিক কাজ করেছেন বা বিপ্লব কেবল বুদ্ধিবৃত্তিক কাজ। এক্ষেত্রেও আমরা দেখি লেনিনের বুদ্ধিবৃতিক চর্চাও তাঁর বিপ্লবী কর্মকান্ড বা প্রতিদিনের সংগ্রামের সাথে অবিচ্ছেদ্য। বিপ্লবের অর্থনীতিবাদী যান্ত্রিক ধারণার বদলে তার রাজনৈতিক প্রশ্নকে সামনে এনে রাশিয়াতে জার ও কেরেনেস্কি সরকারকে উচ্ছেদ করে দুনিয়ার ইতিহাসে প্রথম সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব সফলভাবে সম্পন্ন করেন। লেনিন প্রতিষ্ঠিত রাশিয়া পরবর্তীকালে তাঁর সুযোগ্য উত্তরসূরি মহান স্ট্যালিনের নেতৃত্বে সারা দুনিয়ার মুক্তিকামী মানুষের আশার দিশারীতে পরিণত হয়েছিল। ইউরোপের অন্ধকারাচ্ছন্ন দেশ বলে পরিচিত রাশিয়া মানুষের জীবনের এক অনন্য অগ্রগতি সাধন করেছিল যা গোটা দুনিয়ার মানুষকে হতবাক করেছিল, রক্ষা করেছিল হিটলারের নাৎসি আগ্রাসন থেকে পৃথিবীকে। পুঁজির একচেটিয়া রূপ ও সাম্রাজ্যবাদী অর্থনীতিকে বিশ্লেষণ করে লেনিন দেখান পুঁজিবাদ টিকে থাকা মানেই যুদ্ধ টিকে থাকা। তাই পৃথিবীকে যুদ্ধ ও হানাহানি মুক্ত করতে হলে পুঁজিবাদকে বিদায় করা ছাড়া ভিন্ন কোন পথ নেই।

নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, আজকের দিনে পুঁজিবাদী শাসন ফ্যাসিবাদী বৈশিষ্ট্য নিয়েই টিকে থাকবে। আমাদের দেশেও এক চূড়ান্ত ফ্যাসিবাদী শাসন চলছে। পুঁজিবাদী দুঃশাসনে মানুষের দিশেহারা অবস্থা। এর বিপরীতে সমাজতন্ত্রের সংগ্রাম, পুঁজিবাদকে হটানোর সংগ্রামকে জোরদার করাই লেনিনের শিক্ষা। আবার বিশ্বব্যাপী যে যুদ্ধের দামামা বাজছে সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলো নিজেদের কর্তৃত্ব রক্ষা করতে যেভাবে একে অপরের বিরুদ্ধে হামলে পড়ছে, গোটা দুনিয়ার মানবতাকে বিপন্ন করছে তা থেকে পরিত্রাণ পেতে আমাদের যেতে হবে লেনিনের কাছে। তাই একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়, মৃত্যুর একশত বছর পরে লেনিন বিশ্ব মানবাত্মার মুক্তি তথা শ্রমিকশ্রেণির মুক্তির সংগ্রামে এখনও অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক।

সভার শুরুতে বাসদ নেতৃবৃন্দ সর্বহারার মহান নেতা কমরেড লেনিনের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।