পিছু হটল সিডিএ আন্দোলনের মুখে


রুদ্রবাংলা প্রকাশের সময় : এপ্রিল ৩, ২০২৪, ১০:৫২ /
পিছু হটল সিডিএ আন্দোলনের মুখে

বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সবচেয়ে নান্দনিক, ছায়াঘেরা, দ্বিতল সড়কখ্যাত টাইগারপাসের ইউসুফ চৌধুরী সড়কে ৪৬টি গাছ কেটে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের র্যাম্প নির্মাণের সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটেছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। চট্টগ্রামের নাগরিক সমাজ, পরিবেশবাদীদের আন্দোলনে ফলে পূর্বের সিদ্ধান্ত পাল্টাল সংস্থাটি।

এর আগে শতবর্ষীসহ ছোট, মাঝারি ও বড় আকারের বিভিন্ন প্রজাতির ৪৬টি গাছ কেটে নগরীর টাইগারপাসে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের র্যাম্প নির্মাণের উদ্যোগ নেয় নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। এরপরই তুমুল সমালোচনার মুখে পড়ে সিডিএ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের আন্দোলন গড়ায় রাজপথে। শুরুতে সিডিএ এই বিষয়ে মুখ না খুললেও তীব্র সমালোচনা ও গত সোমবার নাগরিক সমাজের মানববন্ধনের পর নমনীয় ভাব দেখান সিডিএর কর্মকর্তারা।

মঙ্গলবার(২ এপ্রিল) সিডিএর কনফারেন্স কক্ষে চট্টগ্রাম নাগরিক সমাজের একটি প্রতিনিধিদল সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে। এতে উপস্থিত ছিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত সমাজবিজ্ঞানী চট্টগ্রাম নাগরিক সমাজের চেয়ারম্যান ড. অনুপম সেন, সদস্যসচিব ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, প্রফেসর ইদ্রিস আলী, কামরুল হাসান বাদল প্রমুখ। সিডিএর পক্ষে চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস, প্রকল্প পরিচালক মাহফুজুর রহমান। এ সময় উভয়পক্ষে মতবিনিময় হয়।

ড. অনুপম সেন বলেন, ‘চট্টগ্রাম নগর প্রকৃতির লীলাক্ষেত্র। কিন্তু সভ্যতার আগ্রাসনে সবকিছু নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। চট্টগ্রামের চমৎকার প্রাকৃতিক স্থান সিআরবিকে আমরা আগ্রাসন থেকে রক্ষা করেছি। দেশরত্ন শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে বহু উন্নয়ন করেছেন, যা ঈর্ষণীয়। উন্নয়ন তো দরকার, কিন্তু পরিবেশ বিঘ্নিত হলে সব উন্নয়নই ব্যর্থ হয়ে যাবে। এখানে ১৪-১৫টি র্যাম্প করা হচ্ছে। অথচ ২-৩টি র্যাম্প হলেই চলে। অতিরিক্ত র্যাম্পগুলো শহরে যানজটের সৃষ্টি করে। বেশিসংখ্যক র্যাম্পের কারণে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতেও যানজট হবে। বিশেষ করে দ্বিতল রাস্তা এক অপূর্ব সুন্দর জায়গা। সেখানে আমার মনে হয় না র্যাম্পের প্রয়োজন আছে। হলে একটি কুৎসিত ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে।’

নাগরিক সমাজের ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল বলেন, ‘চট্টগ্রামের মানুষের সেন্টিমেন্টের বাইরে কিছু করবেন না। আমরা বিশেষজ্ঞদের নাম জমা দেব। সবাই মিলে যেটা ঠিক করব সেভাবে হবে।’ কামরুল হাসান বাদল বলেন, ‘চট্টগ্রামের জনগণ এটা চান না। এখানে র্যাম্প করবেন না। সাধারণ মানুষ এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করবেন না। এখানে টোল দিয়ে উঠতে হবে।’

বৈঠকে আলোচনায় সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ বলেন, ‘এখানে কিছু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। শতবর্ষী কোনো গাছই কাটা হবে না। ছোট কিছু গাছ কাটা হবে। গাছগুলো বন বিভাগ মার্কিং করেছে। আমরা করিনি। নকশা দেখলে বুঝতে পারবেন। প্রয়োজনে সাইজ আরও ছোট করতে বলেছি।’

সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, ‘নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা তাদের মতামত জানিয়েছেন। আমরা টাইগারপাসে শতবর্ষী কোনো গাছ কাটব না। কিছু ছোট গাছ কাটা হতে পারে। দ্বিতল সড়কের ওপরের লেইনে র্যাম্প নামানো হবে। নতুন করে নকশা করা হবে এবং ঈদের পরে আবারও একটা প্রেজেনটেশন দেওয়া হবে। সবার সঙ্গে আলোচনা করেই সব করা হবে। সেই ডিজাইনটা সবাইকে দেখানো হবে। কেউ না চাইলে করা হবে না। সেটি অনুমোদন করা হলে তারপর কাজ শুরু হবে। এখনই কাজ শুরু করা হচ্ছে না।’

সিডিএর বোর্ড সদস্য, স্থপতি আশিক ইমরান খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমরা টাইগারপাসে আজ (মঙ্গলবার) দীর্ঘ সময় ধরে সরেজমিনে ঘুরে দেখেছি। আমাদের সঙ্গে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক ও সিডিএর দুজন প্রকৌশলী ছিলেন। যেই গাছগুলো র্যাম্পে পড়েছে সেগুলোর বেশির ভাগ গাছই ছোট। তবুও আমরা একটা বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছি। সেটি হচ্ছে র্যাম্প ছিল ‘টি’ আকারের। আমরা এখন সেটিকে ‘এল’ আকারের করতে বলেছি। এখন র্যাম্প ওপরের সড়কে নেওয়া হবে। হয়তো ওপরের সড়কটি কিছুটা প্রশস্ত কমে যাবে ল্যান্ডিং অংশে। এটি হলে খুব বেশি গাছ কাটা পড়বে না। যেহেতু এটি চট্টগ্রামবাসীর আবেগের স্থান, সেহেতু এটি না করার পক্ষে আমরা। সিডিএ সেটিতে রাজি হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘উন্নয়ন যেমন প্রয়োজন তেমনি র্যাম্পও প্রয়োজন। ওই স্থানে র্যাম্প করা হচ্ছে শুধু মানুষ যেন আশপাশের এলাকায় দ্রুত যেতে পারে এবং যানজটে না পড়ে। তা ছাড়া র্যাম্প করা না হলে অনেক মানুষ ৬ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বিশাল একটি অংশ ব্যবহার করতে পারবে না। আমরাও সিডিএকে বলেছি আপনারা তাড়াহুড়ো না করে সময় নিন, যাচাই-বাছাই করুন। হয়তো আরও ভালো কিছু বেরিয়ে আসতে পারে।’